বর্তমান সময়ে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে যে জিনিস্টি না হলেই চলে না, সেটি হলো কম্পিউটার। আর সেই কম্পিউটারে যদি ইন্টারনেটের সংযোগ থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই! কিন্তু কম্পিউটার কিন্তু কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, আমাদের অতি প্রয়োজনীয় কাজের অংশও হতে পারে। কম্পিউটারের এই উপকারী ব্যবহারগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। কী এই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং? কীভাবে আপনার কাজে আসতে পারে এটি? চলুন, এক নজরে জেনে নেওয়া যাক!
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কী?
কম্পিউটারকে নানারকম নির্দেশনা দিলে এটি ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে থাকে। আর যন্ত্রটিকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়াকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং বলে। যেকোনো যন্ত্রকেই কাজ করাতে হলে এর ভেতরে কিছু প্রোগ্রামিং প্রবেশ করানোর প্রয়োজন পড়ে। আপনার কম্পিউটারকে পরিচালনার জন্যও এ সম্পর্কে জানা দরকার। জন্মের পর আপনি কি কথা বলতে পারতেন? উঁহু! একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পর একটা সাদা পাতার মতো অবস্থায় থাকে। একটু একটু করে তাকে নতুন নতুন কথা, আচরণ ইত্যাদি শিখিয়ে নিতে হয়। শিশু তার চারপাশের পরিবেশ দেখে এসব শেখে এবং নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখে। কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে। আপনি কম্পিউটার খুললেই যে গান শুনতে পাচ্ছেন, লিখতে পারছেন- এর সবগুলোর পেছনেই রয়েছে প্রোগ্রামিং। কম্পিউটার খুললেই এমন হাজার হাজার প্রোগ্রাম কাজ করা শুরু করে। প্রোগ্রামিং মূলত কম্পিউটারের ভাষা।প্রোগ্রামিং-এর ল্যাঙ্গুয়েজ কত রকম?
হাজার হাজার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে। আপনি যদি একটির মাধ্যমে কাজ শুরু করেন তাহলে ধীরে ধীরে অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজগুলো শিখে নেওয়াও আপনার জন্য সহজ হবে। C, C+, Python, Java এমন অনেক অনেক ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে, যেগুলো আপনাকে শুধু কাজের সুযোগ নয়। আনন্দও দেবে।
কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর সুফল কী?
আরো অনেক বিষয়ের মতো কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখারও রয়েছে কিছু উপকারিতা। কী সেগুলো? চলুন, দেখে নেওয়া যাক!১। চাকুরিক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্যতা
প্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্টতা বর্তমান সময়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা করে দেয়। আর তাই, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার মাধ্যমে নিজের জন্য এই সুযোগ সহজেই তৈরি করতে পারেন আপনি।
২। আউটসোর্সিং-এর সুযোগ
বর্তমানে অনলাইন আউটসোর্সিং আয়ের অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম। ঘরে বসেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করে আয় করতে পারেন আপনি। যেকোনো প্রতিষ্ঠানেরই কম্পিউটার প্রোগ্রামের দরকার পড়ে। তাই কাজ এবং অর্থ দুটোই পাবেন আপনি এখানে। মোবাইল অ্যাপ তৈরি করাও সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
৩। কাজের সময়ে নমনীয়তা
কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের জন্য সবচাইতে বড় সুবিধাটি হচ্ছে এই যে, তারা কাজের সময়ের ক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা উপভোগ করতে পারে। এমন নয় যে, প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় আপনাকে কাজ করতে হবে এজন্য। অল্প সময়ে প্রচুর পরিশ্রম দিয়ে সহজেই গতানুগতিক জীবন থেকে বেরোতে পারবেন আপনি।
২০১৬ সালের হিসেব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের বাৎসরিক আয় ৭৯ হাজার ডলারের বেশি। আপনি হয়তো বাংলাদেশে আছেন। তবে, ইন্টারনেটের সাহায্যে যেকোনো দেশের কাজ করতে পারবেন আপনিও। আর তাই, আয়ের ক্ষেত্রে সুযোগ-যুবিধা আরো বেশি উপভোগ করতে পারবেন আপনি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কীভাবে শিখবেন? কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখা প্রাথমিকভাবে খুব কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে আপনার জন্য বেশ সহজ হয়ে যাবে প্রক্রিয়াটি। ল্যাঙ্গুয়েজ মনে রাখাটা কষ্টকর। তবে একটা সময় অভ্যাস হয়ে গেলে এই কষ্টকর ব্যাপারটি আর কষ্টকর থাকবে না। ভিডিও টিউটরিয়াল দেখে এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে এ বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন আপনি। এছাড়া, কম্পিউটার প্রোগ্রামিংএর উপরে অনেক অনেক বাংলা বই রয়েছে। তবে আপনি যদি প্রথম থেকে শুরু করতে চান, তাহলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (১ম খণ্ড), (২য় খন্ড), (৩য় খন্ড), ‘the Art of Computer Programming’, মোঃ কামরুজ্জামান লিটনের ‘সবার জন্য কম্পিউটার’ইত্যাদি বইগুলো রকমারি থেকে সংগ্রহ করতে পারেন আপনি। এর মতো বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন। তামিম শাহরিয়ার সুবিনের এই বইটি আপনাকে অতিরিক্ত কোনো ঝামেলা ছাড়াই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ ঝরঝরে হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তো, কী ভাবছেন? কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর এই জগতে আপনিও প্রবেশ করছেন তো?
No comments:
Post a Comment